সুপ্রিয় পাঠক, আপনি যদি দলিল কি? দলিল কত প্রকার ও কি কি জানতে চান তাহলে আজকের পোস্টটি শুধুমাত্র আপনার জন্য । চলুন আর দেরি না করে দলিল কি? দলিল কত প্রকার ও কি কি জেনে নেওয়া যাক।
দলিল কি?
সুপ্রিয় পাঠক, এখন আমি দলিল কি? নিয়ে আলোচনা করবো। আমরা বিভিন্ন ক্ষেত্রে দলিল শব্দটি ব্যবহার করে থাকি।তাই দলিল কি? এই বিষয়টি জানা থাকা জরুরী। তাই চলুন আর দেরি না করে দলিল কি? জেনে নেওয়া যাক।
আরো পড়ুন: জীবন সঙ্গী কেমন হওয়া উচিত জেনে নিন
দলিল বলতে সাধারণত যে কোন চুক্তির লিখিত রুপকে বোঝায় তা সর্বজনগাহ্য। তবে যদি বাংলা ভাষায় দলিলের সজ্ঞা দিতে চাই তাহলে বলতে হবে সম্পত্তি, জমি-জমা ক্রয়-বিক্রয়, জমি-জমা বন্টন বা জমি-জমা হস্তান্তর করার জন্য যে চুক্তি সম্পাদিত হয় তাকে দলিল বলে।
আশা করি দলিল কি? এই প্রশ্নের উত্তর আপনি পেয়েছেন। এখন আমি দলিল কত প্রকার ও কি কি এ বিষয় নিয়ে আলোচনা করবো। চলুন আর দেরি না করে দলিল কত প্রকার ও কি কি নিয়ে আলোচনা করা যাক।
দলিল কত প্রকার ও কি কি
সুপ্রিয় পাঠক এতক্ষণ আমরা জানলাম দলিল কি? এখন আমরা জানবো দলিল কত প্রকার ও কি কি? পাশাপাশি আলোচনা করবো সাফ কবলা দলিল কি, হেবা দলিল কি, দানপত্র দলিল কি, বন্টন নামা দলিল কি, এওয়াজ দলিল কি, নাদাবি দলিল কি, অছিয়ত নামা দলিল কি ও বায়না পত্র দলিল কি। চলুন সবার আগে জেনে নেওয়া যাক দলিল কত প্রকার ও কি কি?
বাংলাদেশের ভূমি আইন মোতাবেক ৯ টি জমির দলিলের কথা বলা হয়েছে । এবং সর্বমোট ১৭ টি দলিলের উল্লেখ পাওয়া যায়। নিচে সেগুলো উল্লেখ করা হলো।
- সাফকবলা দলিল
- দানপত্র দলিল
- হেবা দলিল
- হেবা বিল এওয়াজ
- এওয়াজ দলিল
- বন্টননামা দলিল
- অছিয়ত নামা দলিল
- উইল দলিল
- না-দাবী দলিল
- বয়নামা দলিল
- দখলনামা দলিল
- রায় দলিল
- ডিক্রি দলিল
- আরজি দলিল
- আদালত যোগে সাফকবলা দলিল
- বায়নাপত্র
- বেনামী দলিল
সাফকবলা দলিল
কোন ব্যক্তি যখন তার নিজের সম্পত্তি অন্যের নিকট বিক্রি করে তখন সেই বিক্রয়মালিককে যে দলিল সম্পাদন করে দেয় তাকে সাফকবলা দলিল বা বিক্রয় দলিল বা খরিদা দলিল বলা হয়।এই কবলা বিক্রেতা নির্দিষ্ট স্ট্যাম্পে লিখে স্বাক্ষর করবে এবং রেজিস্ট্রারী শরীরে উপস্থিত হয়ে ক্রেতাকে রেজিস্ট্রার করে দেবে।এই স্বাক্ষরকৃত দলিল রেজিস্ট্রার হবার সাথে সাথেই দলিলে উল্লিখিত তফসীল অনুযায়ী এই জমির সমস্ত মালিকানা গ্রহীতির কাছে বর্তায়। অর্থাৎ এই জমির সমস্ত মালিকানা চলে যায় গ্রহিতার কাছে।এজন্য দাতার কোন ওয়ারিশগন পরবর্তীতে এই জমি আর নিজের বলে দাবি করতে পারবে না।
আরো পড়ুন: রুম হিটার ব্যবহারের নিয়ম – রুম হিটারের ক্ষতিকর দিক জেনে নিন
দানপত্র
দানপত্র দলিলের মাধ্যমে যে কোন ব্যক্তি বা সম্প্রদায় তার মালিকানা দান করতে পারেন। যে দলিলের মাধ্যমে কোন ব্যক্তি বা সম্প্রদায় তার কোন বিষয় সম্পত্তির মালিকানা কোন প্রকার শর্ত ছাড়া কোন ব্যক্তি বা সম্প্রদায়ের নিকট হস্তান্তর করেন তাকে দানপত্র দলিল বলে। দানপত্র দলিলে কোন প্রকার শর্ত উল্লেখ থাকলে সে দানপত্র শুদ্ধ দানপত্র হয় না।
হেবা
হেবা দলিলটি মুসলিম সম্প্রদায়ের জন্য।অর্থাৎ মুসলিম সম্প্রদায়ের দানপত্রের জন্য এই হেবা দলিল প্রযোজ্য। মুসলিম সম্প্রদায়ের কোন ব্যক্তি সন্তুষ্ট হয়ে এই দানপত্র করে থাকে ।এর জন্য কোন বিনিময় গ্রহন করা হয় না। এই দলিলে কোন প্রকার শর্তবিহীন অবস্থায় যা দান করা হবে অর্থাৎ যা দান করা হবে তার সমস্ত মালিকানা হেবা করতে হবে। এক্ষেত্রে দাতার কোন প্রকার শর্ত থাকলে তা হেবা দলিল হিসাবে গ্রাহ্য হবে না। এবং তা যে কোন সময় বাতিল বলে ঘোষনা করা যাবে। অর্থাৎ হেবা দলিলে দাতার কোন স্বার্থ সংরক্ষিত থাকে না।
হেবা বিল এওয়াজ
হেবা বিল এওয়াজও মুসলিম সম্প্রদায়ের একটি দানপত্র।হেবা বিল এওয়াজও সন্তুষ্ট হয়ে করা হলেও এতে কোন কিছুর বিনিময়ে হয়ে থাকে।এই হেবা বিল এওয়াজ যে কোন কিছুর বিনিময়ে করা হয়ে থাকে। (যেমর, কোরান, তজবিহ, জায়নামাজ. মোহরআনা, আংটি)। এই হেবা বিল এওয়াজ দলিলটিও শর্তবিহীন অবস্থায় হতে হবে। কোন প্রকার শর্ত আরোপ করা হলে এই দলিল শুদ্ধ বলে গন্য হবে না। তবে এই হেবা বিল এওয়াজ দলিলটি অবশ্যই রেজিস্ট্রি হতে হবে।
এওয়াজ
এওয়াজ দলিল হচ্ছে এমন একটি দলিল যে দলিলে যেকোন সম্প্রদায়ের বা একই সম্প্রদায়ের বা বংশের বা যেকান ব্যক্তি যেকোন ব্যক্তির সাথে তার জমির মালিকানা পরিবর্তন করতে পারবে অর্থাৎ ক্ষমতা রদবদল করতে পারবে। এজন্য এওয়াজ দলিলটি অব্যশই রেজিস্ট্রি অফিস থেকে রেজিস্ট্রার করে নিতে হবে।
আরো পড়ুন: এনআইডি(NID) আইডি কার্ড দিয়ে কয়টি সিম রেজিস্ট্রেশন করা হয়েছে জেনে নিন
আরো সহজ করে এটির ব্যাখ্যা দেওয়া যায়, মনে করুন তমিজের এক বিঘা জমি করিমের বাড়ির নিকট অপরদিকে করিমের এক বিঘা জমি তমিজের বাড়ির নিকট।এক্ষেত্রে তমিজের জমি করিমকে এবং করিমের জমি তমিজকে দিয়ে তারা একটি এওয়াজ দলিল সম্পাদন করে রেজিস্ট্রি অফিস থেকে রিজিস্ট্রী করে নিতে পারে।
বণ্টননামা
একই বংশের শরীকগণের মধ্যে ছাহাম প্রাপ্ত হয়ে যে বন্টন ক্রিয়া সম্পাদন করে সকল শরীকগণের স্বাক্ষর সম্বলিত যে দলিল রেজিস্ট্রার অফিসে গিয়ে রেজিস্ট্রার করা হয় তাকে বণ্টননামা দলিল বলে। শরীক সাধারণত দুই ভাবে হতে পারে।
- উত্তরাধিকার সুত্রে শরীক
- ক্রয়সুত্রে শরীক
- কো -শেয়ারার বাই ইনহেরিটেন্স এন্ড
- কো-শেয়ারার বাই পারচেজ
অছিয়তনামা
অছিয়তনামা দলিল এমন একটি দলিল যে দলিলে কোন ব্যক্তি তার সম্পত্তি যে কাউকে বা তার উত্তরাধিকারদের মধ্যে সবাইকে না দিয়ে যে কোন একজন ব্যক্তিকে অছিয়ত করে গেলে তার মৃত্যুর পর তার অছিয়তকৃত জমি তার উত্তরাধিকারগণ দাবি করলে যে ব্যক্তিকে অছিয়ত করা হয়েছিলো সে একতৃতীয়াংশ জমির মালিক হবে এবং বাকি দুই তৃতীয়াংশ জমি তার উত্তরাধিকারগণ পাবেন।
উইল
উইল দলিল সাধারণত হিন্দু সম্প্রদায়ের একটি দানপত্র্র। হিন্দু সম্প্রদায়ের কোন লোক যদি তার স্বজনদের মধ্যে কাউকে কোন সম্পত্তি দান করলে তাকে উইল বলে। একজন ব্যক্তি তার জীবদ্দশায় একাধিক ব্যক্তিকে তার সম্পত্তি উইল করে যেতে পারেন। তবে সর্বশেষ যাকে উইল করবেন তা সর্বজনগ্রাহ্য বলে বিবেচিত হবে।
আরো পড়ুন: তরমুজ চাষ পদ্ধতি ২০২৩
না-দাবী
না-দাবী দলিল এমন এতটি দলিল যে দলিলে কোন ব্যক্তি তার নিজস্বত্বাধিকার নাই মর্মে অথবা তিনি তার স্বত্বাধিকার ত্যাগ করছেন এই মর্মে কোন সম্পত্তি কাউকে মালিকানা হস্তান্তর করে যদি রেজিস্ট্রি করে দেন তাকে না-দাবী দলিল বলে।
বয়নামা
এটি একটি প্রাচীন প্রথা। এই প্রথায় কোন জমির মালিক যদি জমিদারকে খাজনা দিতে অপারগ হতো তাহলে আদালতে খাজনার নালিশ করতেন এবং আদালতে ডিক্রি করতেন। জমির মালিক খাজনা দিতে না পারলে উক্ত জমি আদালত কতৃক নিলামে আনা হতো। এতে যে কোন জনসাধারণ নিলামে অংশগ্রহণ করে সেই জমির মালিকানা নিতে পারতেন।
আরো পড়ুন: অফিসিয়াল ফোন চেনার উপায়
দখলনামা
দখল নামা দলিল এমন একটি দলিল যে দলিলে বণ্টনমামলায় স্বত্ব নির্ধারণ পূর্বক খাস দখল উৎখাত ও প্রিয়েমশান মামলায় ডিক্রির পর আদালত হতে পদাতিক নায়েব বা নাজির যখন উক্ত জমি দখল করে উক্ত পরওয়ানা আদালতে দাখিল করে তাকে দখল নামা দলিল বলে।
রায়
রায় দলিল এমন একটি দলিল যে দলিলে কোন সম্পত্তি, টাকা পয়সা বা কোন কিছুর নালিশ হলে আদালত বাদী বিবাদীল স্বাক্ষ্য গ্রহণ করার পর দুই একটি শুনানির পর রায় প্রদান করে তাকে রায় দলিল বলা হয়।
ডিক্রি
ডিক্রি দলিল এমন একটি দলিল যে দলিলে রায়ের আদেশ অনুসারে রায়ের আদেশাংশ ও বাদী -বিবাদীর নাম ঠিকানা ও জমির তফসিল সংক্রান্ত একটি দলিল আদালত কতৃক গৃহীত হয় তাকে ডিক্রি দলিল বলে।
আরজি
আরজি দলিল হচ্ছে এমন একটি দলিল যে দলিলে বাদী বিরোধীয় জমির বিরোধ নিষ্পত্তির জন্য আদালতে বিবাদীগণের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র দখল করে এবং প্রতিকার প্রার্থনা করে তাকে আরজি দলিল বলা হয়।
আরো পড়ুন: টেলিটক নাম্বার দেখার উপায় জেনে নিন
আদালত যোগে সাফকবলা
আদালত যোগে সাফকবলা হচ্ছে এমন একটি দলিল যেখানে কোন ব্যক্তি যদি কোন জমি বিক্রির উদ্দেশ্যে কারো কাছে জমির বিনিময়ে বায়না নেয় এবং পরবর্তীতে বায়নার টাকা না দিয়ে জমি দলিল করে না দেয় তাহলে বায়না প্রদানকারী জমির দলিল করার জন্য আদালতে মামলা করে জমি দলিল করে নিতে পারেন তাকে আদালত যোগে সাফকবলা বলা হয়।
বায়নাপত্র
বায়নাপত্র হচ্ছে এমন একটি দলিল যেখানে কোন ব্যক্তি যদি তার জমি বিক্রয়ের উদ্দেশ্যে বায়না গ্রহণ করে কোন চুক্তি করে থাকে তাকে বায়নাপত্র বলে। এক্ষেত্রে বায়না গ্রহণকারী যদি তার জমি বায়নাকারিকে বুঝিয়ে দেন এবং বায়না কারী তা বুঝিয়ে পান আর কোন কারণে বায়নাগ্রহণ কারী যদি তার জমি দলিল করে দিতে না পারেন বা না দেন তাহলে উ্ক্ত জমির মালিক বায়নাকারী হবেন এমনটি দলিল আইনের ৫৩ নং ধারাতে আংশিক দলিল হয়েছে বলে ধরা হয় এবংজমিতে ক্রেতার স্বত্ব রয়েছে বলা ধরা হয়।
বেনামী দলিল
কোন ব্যক্তি যদি কোন কারণে নিজের নামে জমি দলিল করতে না পারেন বা সমস্যার সমক্ষিন হন তাহলে সে তার নিজের নামে না নিয়ে তার কোন আত্মীয় স্বজন বা বিশ্বস্ত বন্ধুর নামে বেনামী দলিল করতে পারেন।এছাড়া কোন ব্যক্তি তার সম্পত্তি নষ্ট হওয়ার ভয়ে অথবা ঋণের দায়ে নষ্ট হওয়ার সম্ভবনা থাকলে তার আত্মীয় ও বন্ধুবান্ধবের নামে দলিল করে দিতে পারেন। এটি একটি সাফকবলা বলে গন্যহবে ক্ষেত্র বিশেষে তা দানপত্র বলে গন্য হবে।
আরো পড়ুন: প্রেশার লো হলে করণীয় ১০টি কাজ – প্রেশার লো এর ১৫ লক্ষণ
পরিশেষে:
আজকের এ আর্টিকেলে আমি দলিল কি? দলিল কত প্রকার ও কি কি বিস্তারিত আলোচনা করেছি। আপনি যদি পুরো আর্টিকেলটি মনোযোগ সহকারে পড়ে থাকেন তাহলে অবশ্যই দলিল কি? দলিল কত প্রকার ও কি কি জানতে পেরেছেন। দলিল কি ? দলিল কত প্রকার ও কি কি সম্পর্কে আপনার কোন মন্তব্য থাকলে আমাদের কমেন্ট বক্সে অবশ্যই মন্তব্য করবেন। এ ধরণের পোস্ট পেতে নিয়মিত আমাদের ওয়েবসাইটটি ভিজিট করুন।