সুপ্রিয় পাঠক বন্ধুরা, আজকে আমি পিরিয়ডের সময় স্বামীর করণীয় নিয়ে আলোচনা করবো। পিরিয়ড বা মাসিক নারীদের জন্য খুবই সংবেদনশীল একটি বিষয়। পিরিয়ডের দিনগুলোতে রজঃশ্রাবের বেশির ভাগ নারীদের মানসিক পরিবর্তন হয়ে থাকে। এ সময় কিভাবে স্ত্রীর সাথে আচরণ করতে হবে এ বিষয়ে অনেক স্বামীই জানেন না। তাই আজকের এ আর্টিকেলের মাধ্যমে আমি স্ত্রীর পিরিয়ড হলে স্বামীর করণীয় নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করার চেষ্টা করবো। এসব কিছু জানার আগে আমাদের জানতে হবে পিরিয়ড কি?
পিরিয়ড কি?
হরমোনের প্রভাবে প্রতি চন্দ্রমাস পরপর প্রাপ্ত বয়স্ক মেয়েদের চক্রাকারে জরায়ু থেকে যে রক্ত ও জরায়ুরস যোনি দিয়ে বেড়িয়ে আসে তাকে পিরিয়ড বলে। প্রতি মাসেে পরিনত মেয়ের এ পিরিয়ড বা মাসিক বার ঋতুচক্র হয়ে থাকে। পিরিয়ডকে মাসিক বা ঋতৃুচক্রও বলা হয়।
আরো পড়ুন: খালি পেটে ডায়াবেটিস কত থাকে
পিরিয়ডের সময় স্বামীর করণীয়
পিরিয়ডের সময় স্বামীর করণীয়: পিরিয়ডের দিনগুলোতে একজন মেয়েদের মনের পরিবর্তন হয়ে থাকে। এ সময় তারা স্বামীর কাছ থেকে সংবেদনশীল আচনরণ আশা করে থাকে। তাই স্বামীদের স্ত্রীর পিরিয়ডের সময় স্বামীর আচরণ কেমন হওয়া উচিত তা জানা দরকার। চলুন পিরিয়ডের সময় স্বামীর করণীয় সম্পর্কে জেনে নিই।
স্ত্রীর মাসিক বা পিরিয়ড হলে স্ত্রীর মানসিক অবস্থার পরিবর্তন হয়ে থাকে। তাই স্বাভাবিক অবস্থায় নাও থাকতে পারে। তাদের মানসিক অবস্থার পরিবর্তনের সাথে সাথে তাদের আচরণগত পরিবর্তন হয়ে থাকে। তাদের মেজাজ স্বাভাবিকের চেয়ে খিটখিটে হয়ে যেতে পারে। স্বামী হিসাবে আপনাকে তার মানসিক বিষয়টি বুঝে নিতে হবে এবং তাকে মানিয়ে নিয়ে স্বাভাবিক আচরণ করতে হবে যাতে সে মানসিকভাবে সুস্থ্য থাকতে পারে।
মাসিক চলাকালে মেয়েদের নানা রকম প্রয়োজনীয় জিনিস প্রয়োজন হয় যা তাদের মাসিকের জন্য ব্যবহার করতে হয়। তাই আপনার স্ত্রীর মাসিক বা পিরিয়ড চলাকালীন প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র কিনে আনুন। যাতে তার প্রয়োজনীয় জিনিসগুলোর ঘাটতি না থাকে। সে অসস্থিবোধ না করে। এ দিকটি আপনাকে খেয়াল রাখতে হবে।
মাসিক চলাকালীন সময়ে সার্বক্ষণিক স্ত্রীর খোঁজ রাখার চেষ্টা করুন। আপনি যদি বাহিরে থাকেন তাহলে ফোনের মাধ্যমে বারবার তার খোঁজ নিতে থাকুন। তিনি খেয়েছেন কিনা? তার কোন বিষয়ে অসস্থি হচ্ছে কিনা তার কোন কিছু খেতে ইচ্ছে করছে কিনা এসব বিষয়ে খোঁজ নিন। সে যেন একাকিত্ববোধ না করতে পারে সেদিকে খেয়াল রাখুন।
আরো পড়ুন: সহবাসের কতদিন পর গর্ভবতী হয়। Sohobaser Kotodin Por Pregnant Hoy
মেয়েদের সার্বক্ষণিক বাড়ীর কাজ করতে হয় । স্বামী হিসাবে অবশ্যই আপনাকে বাড়ীর কাজে আপনার স্ত্রীকে আপনার সহায়তা করা উচিত। মাসিক চলাকালে মেয়েদের শরীর খারাপ থাকে। এসময় আপনি বাড়ীর কাজে স্ত্রীকে সহায়তা করুন।
অধিকাংশ মেয়েরা পিরিয়ড বা মাসিকের সময় অসস্থিবোধ করে থাকেন। তখন তারা একাকি থাকতে পছন্দ করেন। অনেক মেয়ে আবার মাসিক চলাকালীন স্বামীর সাথে সময় কাটাতে চান। তাই আপনাকে তার মনের অবস্থা বুঝে তাকে সময় দিতে হবে। তার কথা শুনতে হবে।
স্বামী স্ত্রীর মধ্যে নানা সময় নানা কারণ নিয়ে ঝগড়া বিবাদ হয়ে থাকে। মাসিক চলাকালীন সময় আপনি আপনার স্ত্রীর সমালোচনা থেকে বিরত থাকুন। এ সময় সমালোচনা করলে আপনার স্ত্রীর মধ্যে বিরুপপ্রতিক্রিয়া দেখা দিতে পারে। এসময় আপনি আপনার স্ত্রীর ইতিবাচক দিকগুলো নিয়ে কথা বলুন। এসময় মেয়ে বেশির ভাগ সময় শুয়ে বসে কাটাতে পারেন। এজন্য আপনাকে তাকে নিয়ে সমালোচনা করা যাবে না।
পিরিয়ডের সময় শুধু আপনি তার খোঁজ নিবেন । তার সমালোচনা থেকে দূরে থাকবেন তাতেই হবে না। এ সময় বাড়ীর অন্য কারো সাথে তার মনোমালিন্য হলে তা সমাধান করার চেষ্টা করুন। তাকে সাপোর্ট দেওয়ার চেষ্টা করুন। সে জন্য মানসিকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ না হন।
এসময় আপনি যদি লক্ষ করেন আপনার স্ত্রীর মানসিক অবস্থার অস্বাভাবিক পরিবর্তন হয়েছে। তাহলে আপনি চাইলে মনোরোগ বিশেষজ্ঞর পরামর্শ গ্রহন করতে পারেন।
মাসিক চলাকালীন সময় মেয়েরা একটু লজ্জিত অবস্থায় থাকেন। এসময় তারা নানা রকম আবেগীয় কথা বলতে পরেন। তাই আপনার স্ত্রী যদি আবেগীয় কথা বলেন তাহলে তা শুনুন। আপনি ও সাথে আবেগীয় কথা বলুন যাতে সে মানসিকভাবে সুস্থ্য থাকতে পারেন।
স্ত্রীর পিরিয়ডের সময় স্বামীর করণীয়
স্ত্রীর পিরিয়ডের সময় স্বামীকে নানা রকম দায়িত্ব পালন করতে হয়। অনেক স্বামীই জানেন না স্ত্রীর মাসিকের সময় তার সাথে কেমন আচরণ করা উচিত বা স্বামী হিসাবে তার করণীয় কি। তাই এখন আমি স্ত্রীর পিরিয়ডের সময় স্বামীর করণীয় নিয়ে আলোচনা করবো। চলুন আলোচনা শুরু করা যাকঃ
স্ত্রীকে সময় দেওয়ার চেষ্টা করুন
একজন মেয়ের যখন মাসিক শুরু হয় তখন সে একাকিত্ববোধ করতে থাকেন। অনেক কথা সে লজ্জায় কাউকে জানাতে পারে না। এসময় আপনি স্ত্রীকে সময় দেওয়ার চেষ্টা করুন। যাতে সে আপনাকে তার সকল সমস্যার কথা জানতে পারে। এসময় একজন স্বামীর স্ত্রীকে সময় দেওয়া উচিত।
স্ত্রীকে নিয়ে ঘুরে আসুন
মাসিকের সময় মেয়েদের মানসিক অবস্থার পরিবর্তন হয়ে থাকে। এসময় তারা একাকিত্বে ভুগতে পারে। তার মেজাজ খিটখিটে হয়ে যেতে পারে। তাই আপনার স্ত্রীর পিরিয়ড চলাকালীন আপনি আপনার স্ত্রীকে নিয়ে কোথাও ঘুরতে যেতে পারেন। এতে তার মন ভাল থাকবে।
সাংসারিক কাজে সহায়তা করুন
মাসিক চলাকালীন সময়েও মেয়েদেরকে নানা রকম সাংসারিক কাজ করতে হয়। এসময় মেয়েদের শরীর খারাপ থাকে। তবুও বাধ্য হয়ে তাকে সাংসারিক কাজ করতে হয়। তাই আপনার স্ত্রীর মাসিক কাজ চলাকালীন সময়ে তাকে আপনি সাংসারিক কাজে সহায়তা করুন। এতে সে মানসিকভাবে স্বস্থিবোধ করবেন।
মনমালিন্য করবেন না
মাসিক চলাকালীন মেয়েদের মানসিক অবস্থার পরিবর্তন হওয়ার কারণে তাদের আচরণ পরিবর্তন হতে পারে। এসময় তাদের মেজাজ খারাপ থাকতে পারে। তাই এসময় স্ত্রীর সাথে খারাপ আচরণ থেকে দূরে থাকুন। তার সাথে সংবেদনশীল আচরণ করুন।
স্ত্রীর পছন্দ অনুযায়ী জিনিস কিনে আনুন
এসময় মেয়েদের মানসিক ও শারিরীক সমস্যা হয়ে থাকে। অধিকাংশ সময় তাদের মন খারাপ থাকে। তাই আপনার স্ত্রীর মাসিক চলাকালীন সময়ে তার পছন্দের জিনিস কিনে আনুন। এতে সে মানসিকভাবে খুঁশি হবে এবং একাকিত্ব দূর হবে।
স্ত্রীকে প্রায়োরিটি দিন
মাসিক চলাকালীন সময়ে স্ত্রীর কথার প্রাধান্য দিন। তার কথার বিশেষ মূল্যায়ণ করুন। সর্বোপরি সে জেন বুঝতে পারেন আপনি তাকে কোন বিষয়ে অবহেলা করছেন না।
আরো পড়ুন: হেঁচকি বন্ধ করার উপায়-হেঁচকি বন্ধ করার দোয়া
পরিশেষে: পিরিয়ডের সময় স্বামীর করণীয়
আশা করি আপনি স্ত্রীর পিরিয়ডের সময় স্বামীর করণীয় সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে পেরেছেন। আমাদের এই পোস্টটি যদি আপনার ভাল লেগে থাকে তাহলে অবশ্যই বন্ধুদের সাথে শেয়ার করুন। এই ধরণের আর্টিকেল পেতে নিয়মিত আমাদের ওয়েবাসাইটটি ভিজিট করুন।