তুমি কি কখনও ভেবেছো, “পঁইত্রিশ” না “পঁইত্রিশ”—কোনটা ঠিক? অথবা “সাতষট্টি” না “সাতসট্টি”—এইরকম বানান নিয়ে দ্বিধায় পড়েছো? তাহলে তুমি একা নও। বাংলা সংখ্যার বানান নিয়ে অনেকেই দ্বিধান্বিত হন, কারণ প্রতিদিন আমরা যেসব বানান ব্যবহার করি, সেগুলোর বেশ কিছু হয় মুখে প্রচলিত, আবার কিছু থাকে প্রাতিষ্ঠানিকভাবে স্বীকৃত। এখানে বাংলা একাডেমির ভূমিকা আসে সবচেয়ে আগে। ১-১০০ বানান বাংলা একাডেমি অনুসারে শেখা মানে হলো ভাষার শুদ্ধতা রক্ষা করা।
বাংলা একাডেমি শুধুই সাহিত্য রচনার স্থান নয়, এটি বাংলাদেশের সরকারিভাবে নির্ধারিত ভাষা নীতিমালার মূল ভিত্তি। কাজেই, সংখ্যা শেখা হোক আর বানান লেখার চর্চা—তুমি যদি একাডেমিক, পরীক্ষাগত বা ভাষাচর্চার দিক থেকে নিজেকে উন্নত করতে চাও, তাহলে এই তালিকা জানা আবশ্যক। অনেক স্কুল ও মাদ্রাসায় তো এখন বাংলা একাডেমির বানানই বাধ্যতামূলক করে দেওয়া হয়েছে।
এই লেখাটির মাধ্যমে তুমি জানতে পারবে ১ থেকে ১০০ পর্যন্ত প্রতিটি সংখ্যার শুদ্ধ বানান কীভাবে লিখতে হয়, কোথায় কোথায় ভুল হবার সম্ভাবনা থাকে এবং বাংলা একাডেমির নির্দেশনা অনুযায়ী কোনটি গ্রহণযোগ্য। এতে করে শুধু তোমার বানান শুদ্ধ হবে না, বরং তুমি নিজেকে ভাষার নিয়ম অনুযায়ী সাজিয়ে নিতে পারবে আরও আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে।
আপনি কেন চান “১‑১০০ বানান বাংলা একাডেমি” জানতে?

তুমি যদি বাংলা শেখা বা শেখানোয় মনোযোগী হও, তাহলে সংখ্যার বানান ঠিকভাবে জানা একান্ত প্রয়োজন। বিশেষ করে, ১‑১০০ বানান বাংলা একাডেমি অনুসারে শেখা হলে তুমি নিশ্চিত হতে পারো যে বানানগুলো সঠিক ও প্রাতিষ্ঠানিকভাবে গ্রহণযোগ্য। বাংলা একাডেমি হলো সেই সংস্থা, যারা ভাষার শুদ্ধতা, প্রয়োগ এবং বানান রীতি নির্ধারণ করে। কাজেই সংখ্যা শেখার ক্ষেত্রেও তাদের মানদণ্ড সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য।
অনেক সময় আমরা দৈনন্দিন লেখালেখিতে সংখ্যা লিখতে গিয়ে বিভ্রান্ত হই—’পঁইত্রিশ না পঁইত্রিশ’, ‘চুয়াত্তর না চুয়াত্তর’—এসব শব্দের বানান যদি তুমি একাডেমি অনুসারে শিখে ফেলো, তবে এই দ্বিধা থাকবে না। তাছাড়া, বিদ্যালয়, বিসিএস বা অন্য যেকোনো সরকারি চাকরির পরীক্ষাতেও এখন বাংলা একাডেমির নিয়ম মেনে উত্তর দিতে হয়। এই নিয়ম জানাটা পরীক্ষার্থীর জন্য আবশ্যক।
তুমি যদি অভিভাবক হও, তাহলে তোমার সন্তানের শেখার শুরুতেই এই বানান তালিকা তাকে দিতে পারো। এতে করে সে ছোট থেকেই সঠিকভাবে বাংলা সংখ্যা লিখতে শিখবে। শিক্ষকের জন্যও এটি জরুরি—কারণ ছাত্রদের শেখানোর সময় ভুল বানান শিক্ষা দিলে তারা ভবিষ্যতে সেই ভুলই ধরে রাখবে।
তাই তুমি যদি একাডেমি স্বীকৃত ভাষাচর্চা করতে চাও, তাহলে ১ থেকে ১০০ পর্যন্ত সংখ্যার বানান শুদ্ধভাবে জানাটা শুধু গুরুত্বপূর্ণই নয়, বাধ্যতামূলকও বটে। এখন চাইলে আমি পরবর্তী অংশ “বাংলা একাডেমির মানদণ্ড কীভাবে কাজ করে?” লেখে দিতে পারি। বলো, শুরু করব?
বাংলা একাডেমির মানদণ্ড কীভাবে কাজ করে?
বাংলা ভাষা নিয়ে যেকোনো প্রাতিষ্ঠানিক নীতিমালার ক্ষেত্রে বাংলা একাডেমির ভূমিকাই প্রধান। তারা ভাষার শুদ্ধতা, গঠন, বানানরীতি ও ব্যবহারিক নিয়ম নির্ধারণ করে থাকে। এখন প্রশ্ন হলো, সংখ্যার বানান নির্ধারণে তারা কীভাবে নির্দেশনা দেয়?
বাংলা একাডেমি নির্দিষ্ট কিছু নীতিমালার ভিত্তিতে বানান সংশোধন করে। উদাহরণস্বরূপ, আগের কোনো প্রচলিত বানান যেমন “ত্রিশ” বা “সাতচল্লিশ” থাকলেও একাডেমি সেটিকে নির্দিষ্ট ছাঁদে প্রয়োগ করে – যাতে এক, দুই, তিন… থেকে শুরু করে একশ পর্যন্ত সবগুলো সংখ্যার বানান একমাত্রিক নিয়মে চলে। এভাবে বানানগুলো একরকম ও সহজবোধ্য হয়। যেমন “পঁইত্রিশ” না বলে একাডেমি বলছে “পঁইত্রিশ”, আর “আটচল্লিশ” নয়, “আটচল্লিশ” – মানে উচ্চারণের সামঞ্জস্যে বানান গঠিত।
তুমি যদি বই, পাঠ্যপুস্তক, প্রশ্নপত্র, বা প্রাতিষ্ঠানিক লেখালেখিতে অংশ নাও, তাহলে এগুলো বাংলা একাডেমির নিয়মে চলে। ফলে সেখানেও তুমি যদি ভুল বানান লেখো, তা ভুল গণ্য হবে—even যদি উচ্চারণ ঠিক থাকে। বিশেষ করে যারা প্রাথমিক থেকে মাধ্যমিক পর্যায়ে পড়ছে বা পড়াচ্ছে, তাদের জন্য এটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কারণ ভুল শেখা মানে ভবিষ্যতের ভাষা দুর্বলতা তৈরি করা।
১‑১০০ বানান বাংলা একাডেমি অনুযায়ী – তালিকা
এখন তুমি পাবে ১ থেকে ১০০ পর্যন্ত প্রতিটি সংখ্যার বাংলা একাডেমি অনুযায়ী বানান। এটি শুধু মুখস্থ করার জন্য নয়, বরং একটি নির্ভরযোগ্য রেফারেন্স তালিকা হিসেবে তোমার কাজে লাগবে। পাঠ্যবই, পরীক্ষার খাতা, অনুশীলনী কিংবা দৈনন্দিন লেখালেখিতে তুমি যেন ভুল না করো, সে জন্য এই তালিকা যথেষ্ট সহায়ক।
নিচে সংখ্যাগুলোর ধারাবাহিক বানান তুলে ধরা হলো:
১. এক
২. দুই
৩. তিন
৪. চার
৫. পাঁচ
৬. ছয়
৭. সাত
৮. আট
৯. নয়
১০. দশ
১১. এগারো
১২. বারো
১৩. তেরো
১৪. চৌদ্দ
১৫. পনেরো
১৬. ষোল
১৭. সতেরো
১৮. আঠারো
১৯. উনিশ
২০. কুড়ি
২১. একুশ
২২. বাইশ
২৩. তেইশ
২৪. চব্বিশ
২৫. পঁচিশ
২৬. ছাব্বিশ
২৭. সাতাশ
২৮. আঠাশ
২৯. উন্তিরিশ
৩০. তিরিশ
৩১. একত্রিশ
৩২. বত্রিশ
৩৩. তেত্রিশ
৩৪. চৌত্রিশ
৩৫. পঁইত্রিশ
৩৬. ছত্রিশ
৩৭. সাঁইত্রিশ
৩৮. আটত্রিশ
৩৯. উনচল্লিশ
৪০. চল্লিশ
৪১. একচল্লিশ
৪২. বিয়াল্লিশ
৪৩. তেতাল্লিশ
৪৪. চুয়াল্লিশ
৪৫. পঁইচল্লিশ
৪৬. ছেচল্লিশ
৪৭. সাতচল্লিশ
৪৮. আটচল্লিশ
৪৯. উনপঞ্চাশ
৫০. পঞ্চাশ
৫১. একান্ন
৫২. বায়ান্ন
৫৩. তিপ্পান্ন
৫৪. চুয়ান্ন
৫৫. পঞ্চান্ন
৫৬. ছাপ্পান্ন
৫৭. সাতান্ন
৫৮. আটান্ন
৫৯. উনষাট
৬০. ষাট
৬১. একষট্টি
৬২. বাষট্টি
৬৩. তেষট্টি
৬৪. চৌষট্টি
৬৫. পঁইষট্টি
৬৬. ছেষট্টি
৬৭. সাতষট্টি
৬৮. আটষট্টি
৬৯. উনসত্তর
৭০. সত্তর
৭১. একাত্তর
৭২. বাহাত্তর
৭৩. তেহাত্তর
৭৪. চুয়াত্তর
৭৫. পঁচাত্তর
৭৬. ছিয়াত্তর
৭৭. সাতাত্তর
৭৮. আটাত্তর
৭৯. উনআশি
৮০. আশি
৮১. একাশি
৮২. বিরাশি
৮৩. তিরাশি
৮৪. চুরাশি
৮৫. পঁচাশি
৮৬. ছিয়াশি
৮৭. সাতাশি
৮৮. আটাশি
৮৯. উননব্বই
৯০. নব্বই
৯১. একানব্বই
৯২. বিরানব্বই
৯৩. তিরানব্বই
৯৪. চুরানব্বই
৯৫. পঁচানব্বই
৯৬. ছিয়ানব্বই
৯৭. সাতানব্বই
৯৮. আটানব্বই
৯৯. নিরানব্বই
১০০. একশো
এই তালিকায় তুমি দেখতে পাচ্ছো কতটা পরিশুদ্ধভাবে ও ধাপে ধাপে সংখ্যাগুলোর বানান গঠিত হয়েছে। মনে রাখবে, কিছু সংখ্যা যেমন ৩৫ বা ৪৫-এর ক্ষেত্রে “পঁইত্রিশ” বা “পঁইচল্লিশ”—এগুলো উচ্চারণভেদে পরিবর্তিত হলেও, বানান একাডেমি অনুযায়ী নির্দিষ্ট।
কেন এই বানান তালিকা শিশুদের শেখানো উচিত?
শিশুদের ভাষার ভিত্তি গড়ে ওঠে ছোটবেলায় শেখা শব্দ ও বানানের মাধ্যমে। যদি তুমি ছোট থেকেই শিশুদের ১-১০০ বানান বাংলা একাডেমি অনুযায়ী শেখাও, তবে তারা ভবিষ্যতে ভাষা ব্যবহারে দক্ষ হয়ে উঠবে। প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পাঠ্যপুস্তক, প্রশ্নপত্র ও সরকারি পরীক্ষায় এখন বাংলা একাডেমির বানান বাধ্যতামূলক। তাই ভুল বানান শেখা মানেই ভবিষ্যতের জন্য বিপদ তৈরি করা।
এই তালিকা শেখার মাধ্যমে শিশুরা সংখ্যার ধারাবাহিকতা, উচ্চারণ ও বানানরীতিতে পারদর্শী হয়। এতে করে তাদের লেখার গতি ও শুদ্ধতা—দুটোই বাড়ে। তাছাড়া, প্রাতিষ্ঠানিক পরীক্ষার প্রস্তুতিতেও এটি কার্যকর। ভুল বানান নিয়ে বারবার সংশোধন না করে তারা শুরু থেকেই নির্ভুলভাবে লিখতে শিখে যায়।
তুমি যদি চাও শিশুরা ভাষার প্রতি আগ্রহী হয়ে উঠুক, তাহলে এই তালিকা শেখানো নিঃসন্দেহে এক চমৎকার উপায়।
প্রায়ই জিজ্ঞাসিত প্রশ্ন (FAQs)
১. বাংলা একাডেমি অনুযায়ী সংখ্যা শেখা কেন গুরুত্বপূর্ণ?
বাংলা একাডেমি দেশের প্রমিত বানান নির্ধারক প্রতিষ্ঠান। একাডেমির বানান অনুযায়ী সংখ্যা শেখা মানে হলো — শুদ্ধ ও গ্রহণযোগ্যভাবে বাংলা চর্চা করা, যা পরীক্ষায় ও লেখালিখিতে সহায়ক।
২. ১-১০০ পর্যন্ত সংখ্যার শুদ্ধ বানান কোথা থেকে শিখবো?
তুমি বাংলা একাডেমি নির্ধারিত বানান তালিকা অনুসরণ করে শিখতে পারো। অনেক শিক্ষামূলক ওয়েবসাইট, প্রাথমিক শ্রেণির বই এবং শিক্ষকেরা এই বানান তালিকা ব্যবহার করেন।
৩. এই সংখ্যা শেখার উপযোগী বয়স কত?
সাধারণভাবে ৫-৭ বছর বয়স থেকেই শিশুরা সংখ্যা শেখা শুরু করে। তবে যেকোনো বয়সে কেউ চাইলে এই তালিকা থেকে সঠিকভাবে শিখতে পারে।
৪. বানান শেখাতে কোন পদ্ধতি সবচেয়ে কার্যকর?
ছবি, ছন্দ, রঙিন চার্ট এবং খেলাধুলার মাধ্যমে শেখানো সবচেয়ে কার্যকর। এতে শিশুরা আনন্দের সাথে সংখ্যা ও বানান মনে রাখতে পারে।
৫. ভুল বানান শেখার প্রভাব কী?
ভুল বানান শিশুদের লেখার অভ্যাসে প্রভাব ফেলে এবং পরীক্ষায় নম্বর কেটে যেতে পারে। প্রাথমিক ভুল পরে সংশোধন করাও কঠিন হয়ে যায়।
৬. প্রতিদিন কতটি সংখ্যা শেখানো উচিত?
প্রাথমিক পর্যায়ে প্রতিদিন ৫-১০টি করে সংখ্যা শেখানো আদর্শ। এতে শিশু চাপ অনুভব না করে ধীরে ধীরে শুদ্ধভাবে শিখে নিতে পারে।
উপসংহার
তুমি যদি শিশুকে বাংলা ভাষার সঠিক ভিত্তি গড়ে দিতে চাও, তবে ১-১০০ বানান বাংলা একাডেমি অনুযায়ী শেখানো একান্ত জরুরি। এটি শুধু একটি সংখ্যা তালিকা নয়—ভাষা শিক্ষার একটি অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ধাপ। শুদ্ধ বানান শেখার মাধ্যমে শিশুরা লেখালিখিতে দক্ষতা অর্জন করে এবং আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে ভাষা প্রয়োগ করতে পারে। একাডেমি নির্ধারিত বানান অনুসরণ করলে ভবিষ্যতের পরীক্ষায়, পঠন-পাঠনে কিংবা প্রাত্যহিক জীবনে ভুলের সম্ভাবনা কমে যায়।
এখনকার শিশুদের মধ্যে ভুল বানান দেখা যায় শুধু এ কারণে যে, তারা প্রাথমিক পর্যায়ে শুদ্ধ তালিকা থেকে শেখেনি। তুমি যদি এই তালিকা নিয়মিতভাবে অনুশীলন করাও, তাহলে খুব অল্প সময়েই ফল পাবে। মনে রাখবে, একটি নির্ভুল লেখা সব সময় প্রশংসিত হয়। আর শুদ্ধতা শুরু হয় ঠিক এই সংখ্যাগুলো থেকেই। এখনই শেখা শুরু করো—নিয়মিত চর্চাই তোমার সঠিক বানানের বন্ধু হবে।
