লাইলাতুল কদর একটি আরবি শব্দ। লাইলাতুল শব্দের অর্থ বাংলাতে তর্জমা করলে এর অর্থ দ্বারায় রাত বা রজনী আর কদর শব্দকে তর্জমা করলে এর অর্থ দ্বারায় তকদীর বা ভাগ্য। লাইলাতুল কদর বা শবে কদরের অর্থ – ভাগ্য রজনী । আমরা অনেকেই লাইলাতুল কদর বা শবে কদরের ফজিলত বা গুরুত্ব সম্পর্কে ওয়াকিবহাল নই।

শবে কদরের ফজিলত সম্পর্কে জানুন

আজকের এ পোস্টে আমি শবে কদরের বা লাইলাতুল কদরের ফজিলত ও গুরুত্ব সম্পর্কে আলোচনা করবো। চলুন শুরু করা যাক:

লাইলাতুল কদর কী? । শবে কদর কী ?

শব – ফার্সি শব্দ । এর অর্থ রাত। কদর – আরবি শব্দ। এর অর্থ মহিমান্বিত। শবে কদর শব্দের অর্থ মহিমান্বিত রাত। আরবিতে বলা হয় লাইলাতুল কদর যার অর্থ মর্যাদাবান বা মহত্বের রাত। বুখারি শরীফে বলা আছে ‘‘ লাইলাতুল কদর বলতে এমর রাতকে বুঝায় যাতে যাবতীয় বিষয়ের পরিমান নির্ধারণ করা হয়। এর চুরান্ত রুপদান করা হয় এবং একটি বছরের জন্য আল্লাহ তা‘লা এই রাতে সব বিধান ও মর্যাদার ফয়সালা করেছেন। এজন্য লাইলাতুল কদরের রাতকে অত্যন্ত মূল্যবান, অতি গুরুত্বপূর্ণ ও মর্যাদাবান রাত বা রজনী বলে অভিহিত করা হয়। সাধারণত রমজান মাসের শেষ ১০ দিনের যে কোন বিজোড় রাত্রিতে শবে কদর হয়ে থাকে।

লাইলাতুল কদরের ফজিলত । শবে কদরের ফজিলত

শবে কদরের রাতকে মহান আল্লাহ তালা বছরের শ্রেষ্ঠতম রাত বলে অভিহিত করেছেন। শবে কদরের মহত্ব ও মহিমা বর্ণনা করতে গিয়ে স্বয়ং আল্লাহ তালা বলেন, “ আমি এ কোরআন কদর তথা মর্যাদাবান রাতে নাজিল করেছি। আপনি কি জানেন কদর রাত কী? কদর রাত হাজার মাসের চেয়ে উত্তম। এ রাতে অবতীর্ণ হয় ফেরেস্তাগণ ও রুহ, প্রতিটি কাজেই তাদের প্রতিপালকের হুকুম অনুযায়ী সম্পাদিত হয়” – সুরা – কদর। 

See also  স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধির ৮ টি উপায় - স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধির ইসলামিক উপায় জেনে নিন

শবে কদর মুসলিম উম্মাহের জন্য আল্লাহ তালার পক্ষ থেকে দান । শবে কদর মুসলিম বিশ্বের জন্য রহমত সরুপ প্রদান করা হয়েছে। এ প্রসঙ্গে মহানবী (স,) বলেন, “ আল্লাহ তায়ালা আমার উম্মতকেই শবে কদর দান করেছেন। এর পূর্বে কোন উম্মতকে তা দান করা হয়নি।” শবে কদর হাজার মাসের চেয়ে উত্তম । এ রাতের মর্যাদা ও গুরুত্ব এতটাই বেশি যে এ রাতকে হাজার মাসের চেয়ে উত্তম বলা হয়। 

লাইলাতুল কদর সম্পর্কিত হাদিস সমূহ। শবে কদরের ফজিলত

লাইলাতুল কদর রমজানুল মোবারকের শেষ ১০ দিনের যে কোন বিজোড় রাতে হয়ে থাকে। শবে কদরের এতটাই মহিমা যে পূর্বেকার নবীগণের উম্মতগণ এক হাজার মাস সাধনা করলে সে সুযোগ আসতো কিনা সন্দেহ আছে। আখেরি জামানার উম্মত হয়ে রাসূলে খোদার রহমতে এক রাতেই তা পাওয়ার নিশ্চয়তা আল্লাহ তালা দিয়েছেন। এর চেয়ে সৌভাগ্যবান আর কি হতে পারে?

আরো পড়ুন: রমজানের ক্যালেন্ডার সম্পর্কে জেনে নিন

এ রাতের যে  কোন আমল এক জাহার মাসের ইবাদতর চেয়ে উত্তম। হাদিস শরীফে পাওয়া যায়, কেউ যদি এ রাতে এক রাকাত নফল নামাজ পড়ে, তার আমল নামায় এক হাজার বছর নফল ইবাদত করার সওয়াব তার আমল নামায় লেখা হয়ে থাকে। 

হযরত মুহম্মদ (স.) একবার সাহাবায়েকেরাম গণের সামনে বনি ইসরাইলের চার আবেদের কথা উল্লেখ করলেন। যারা আশি বছর ইবাদত করেছেন । যারা জীবনে কখনো গুনাহ করেননি। তারা ছিলেন নিষ্পাপ। এ কথা শুনে সাহাবিরা আশ্চর্য হয়ছিলেন। তখনি নাজিল হয়েছে শবে কদর । এক হাজার বছরের চেয়েও উত্তম। 

অন্য একটি বর্ণনায় পাওয়া যায়, হযরত মুহম্মদ (স.) একবার বনি ঈসরাইলের প্রখ্যাত যোদ্ধা শামসুন আবেদের কথা উল্লেখ করে বলেছিলেন এ মুজাহিদের বয়স ছিল হাজার মাস। তিনি দিনের বেলায় রোজা থাকতেন আর রাতের বেলা ইবাদতে মশগুল থাকতেন। তিনি পথভ্রষ্ট বনী ঈসরাইলদের ইমানের পথে আহ্বান জানালে তারা সম্মিলিতভাবে তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধে লিপ্ত হন। হাজার হাজার কাফের তাকে ঘিরে ফেলে কিন্তু তার ঈমানী তেজ ও শক্তির বলে তারা পরাভূত হন। আল্লাহ তালা তাকে বিজয় দান করেন । তার মর্যাদা ছিল অপরীসীম। এ কথা শুণে সাহাবিরা আশ্চর্য হন। এবং তারা হায় হায় করে বলতে শুরু করেন আমাদের যদি এত হায়াত থাকতো! আমরা যদি এভাবে ইবাদত ও জিহাদ করতে পারতাম। আল্লাহ তালা তখনি সুরা কদর নাজিল করেন। 

See also  র দিয়ে ছেলেদের ইসলামিক নামের তালিকা: অর্থসহ বিস্তারিত তালিকা

নবীজী এক হাদিসে বলেন, “ তোমরা যদি তোমাদের কবরসমূহকে আলোকিত রাখতে চাও তাহলে তোমরা শবে কদরে জাগ্রত থেকে আল্লাহর ইবাদ কর।”

প্রিয়নবী হযরত মুহম্মদ সা এরশাদ করেন, “আল্লাহ তালা শবে কদরের রাতের দ্বারাই অন্যান্য রাতকে মর্যাদা দিয়েছেন। কেননা এ রাতেই শ্রেষ্ঠ রাত।” 

তিনি আরো বলেন,

“লাইলাতুল কদরের রাতে হযরত জিব্রাইল আ: সহ সিদরাতুল মোস্তাহায় অবস্থানরত ফেরাস্তারা চারটি পতাকা নিয়ে জমিনে আসেন। একটি পতাকা আমার কবরের উপর, দ্বিতীয় পতাকাটি বায়তুল মোকাদ্দাসে, তৃতীয়টি মসজিদুল হারাম তথা কাবা ঘরে এবং চতুর্থটি সিনাই পর্বতে স্থাপন করবেন। মাদকাসক্ত, মাদক ব্যবসায়ী ও শুকরের মাংস ভক্ষণকারী ছাড়া সকলকে সালাম জানান।”

লাইলাতুল কদরের ফজিলত। শবে কদরের ফজিলত ও গুরুত্ব

  • কোরআন মাজিদ এ রাতে প্রথম নাজিল হয়। 
  • এ মাসের ইবাদত হাজার মাসের ইবাদতের চেয়ে উত্তম।
  • এ রাতে মহান আল্লাহ তালার তাজাল্লী বিকশিত হয়।
  • এ মহান রজনীতে আল্লাহতালা অসংখ্য গুনাহকারীকে মাফ করে দেন।
  • এ রাতের তওবা কবুল হয়। 
  • এ রাতে ইবাদতে মশগুল প্রত্যেক মুমিনকে ফেরাস্তাগণ সালাম করেন। 
  • এ রাতে পিতামাতা আত্মায় স্বজন ও সকল মুমিনের রুহের মাগফেরাতর জন্য দোয়া করলে তা কবুল হয়।
  • এ রাতে হযরত জীব্রাইল আ: স্বীয় পাখা গুলো মেলে ধরেন। 

লাইলাতুল কদর বা শবে কদর রাতে পড়ার দোয়া। শবে কদরের ফজিলত

“ আল্লাহ আপনি তো ক্ষমা পছন্দ করেন আমাকে ক্ষমা করুন।

“আল্লাহ আজকের রাতে আমাকে শবে কদরের ফজিলত দান করো। আমার কর্মকে কঠিন থেকে সহজতর দিকে নিয়ে যাও। আমার অক্ষমতা কবুল করো। আমার পাপ সমূহ মার্জনা করো। হে যোগ্য বান্দাদের প্রতি মেহেরবান খোদা।”

পরিশেষেঃ শবে কদরের ফজিলত । লাইলাতুল কদরের হাদিস

আশা করি শবে কদরের ফজিলত ও লাইলাতুল কদরের হাদিস সমূহ নিয়ে আপনার সামনে বিস্তারিত আলোচনা করতে পেরেছি। শবে কদরের ফজিলত বা লাইলাতুল কদরের ফজিলত. লাইলাতুল কদরের গুরুত্ব ও লাইলাতুল কদর সম্পর্কে হাদিস সম্পর্কে আপনি বিস্তারিত বুঝতে পেরেছেন। 

See also  শবে মেরাজ 2023।শবে মেরাজ কত তারিখে ২০২৩ জেনে নিন