রমজানের ফজিলত,-রোজার গুরুত্ব

রমজানের ফজিলত আরবি সালের নবম মাসটিকে রমজানুল মোবারক বা পবিত্র রমজান মাস বলা হয়। এই মাসের গুরুত্ব ও ফজিলত সম্পর্কে বলে শেষ করা যাবে না। এ মাস আল্লাহ তালার কাছে  অধিক থেকে অধিকতর নৈকট্য লাভের উত্তম মাস। তাই আজকে আমি রমজানের ফজিলত ও রোজার গুরুত্ব সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করবো। চলুন তাহলে আল্লাহর নামে শুরু করা যাক:

 

রমজান মাস মুসলিম উম্মার জন্য রহমতের মাস। এ মাস আল্লাহর নৈকট্য লাভের উৎকৃষ্ট সময়, পরকালিন পাথেয় অজর্নের উৎকৃষ্ট মৌসুম। ইবাদত বন্দেগী, যিকির- আযকার ও আত্মসুদ্ধির ভরা বসন্ত।মুসলিম উম্মাহর জন্য ও মোমিন বান্দার জন্য রমজান মাস আল্লাহ তালার পক্ষ থেকে অনেক বড় নিয়ামত।

তিনি এই মাসের প্রতিটি দিবস ও রজনীতে দান করেছেন অজস্র বৃষ্টির ধারার মতো অশেষ রহমত ও অফুরন্ত কল্যাণ। আল্লাহ তালা এরশাদ করেন,

“(তরজমা) (হে নবী) আপনি বলুন! এটা আল্লাহর অনুগ্রহ ও রহমতেই হয়েছে। সুতরাং এতে তারা যেন আনন্দিত হয়।  তারা যা কিছু সঞ্চয় করে, এটা তার থেকে উত্তম।” – সুরা ইউনুস (১০)-৫৮

আরো পড়ৃন: রোজা কবে থেকে শুরু ২০২৩ জেনে নিন

এ মাসে বান্দা দুনিয়াবী সকল চহিদা বিসর্জন দিয়ে আল্লাহর দয়া ও রহমত লাভের উদ্দেশ্যে অতীতের সকল পাপাচার থেকে ক্ষমা চেয়ে নবরুপে ঈমানী শক্তি দিয়ে জীবন যাপন শুরু করার শপথ নিবে। তাকওয়ার অনুশীলনের মাধ্যমে সারা বছরের ইবাদত করার শক্তি সঞ্চয় করবে। মুসলিম উম্মাহ তাদের চিন্তা-চেতনা, কর্ম-সাধনায় আল্লাহর আনুগত্যে নিজেকে সমর্পিত করবে। আল্লাহ তালা এই পবিত্র মাসকে যেসব গুন ও মর্যাদা দ্বারা বৈশিষ্ট্যমন্ডিত করেছেন, যত রহমত, বরকত এবং দয়া ও অনুগ্রহ দ্বারা একে মহিমান্বিত করেছেন, এ মাসের নেক আমলগুলোর যত সওয়াব ও প্রতিদান নির্ধারন করেছেন তা অতুলনীয়।

রমজান মাসের ফজিলত ও গুরুত্ব। রমজানের ফজিলত

রমজান মাস আল্লাহ তালার পক্ষ থেকে এক অশেষ নিয়ামত, যা বাকী মাসগুলো থেকে রমজানকে আলাদা করেছে। রমজান মাস আল্লাহ তালার কাছে পৌঁছানোর মাস। আল্লাহ তালার নৈকট্য লাভের মৌসুম। এ মাসের ফজিলত ও গুরুত্ব মুসলিম উম্মার জন্য আল্লাহ তালার পক্ষ থেকে এক রমহত ও কল্যান।

See also  ৩৫০০+ মেয়েদের ইসলামিক নাম অর্থসহ ( সকল অক্ষর)

সিয়াম কিয়ামের মাস। রমজানের ফজিলত ও গুরুত্ব

মুসলিম উম্মাহর নিকট রোজা  ও তারাবীহ‘র বার্তা নিয়ে আসে রমজান মাস। এটি রমজান মাসের একটি বিশেষ নিয়াম। তাই প্রত্যেক মোমিনদের কর্তব্য এ বিষয়ে পূর্ণনিষ্ঠা ও আন্তরিকতার সাথে যত্নবান হওয়া। এ বিষয়ে আল্লাহ তালা এরশাদ করেন,

“হে মুমিনগন তোমাদের উপর রোজা ফরজ করা হয়েছে, যেমন ফরজ করা হয়েছিল তোমাদের পূর্ববর্তীদের প্রতি; যাতে তোমরা তাকওয়া অবলম্বনকারী ( মোত্তাকী) হতে পার।” সুরা বাকারা (২)-১৮৩

অন্য একটি সুরায় তিনি এরশাদ করেন,

অনুবাদ – “রমাযান মাস- যার মধ্যে কুরআন নাযিল করা হয়েছে লোকেদের পথ প্রদর্শক এবং হিদায়াতের সুস্পষ্ট বর্ণনারূপে এবং সত্য-মিথ্যার পার্থক্যকারীরূপে, কাজেই তোমাদের মধ্যে যে ব্যক্তি এ মাস পাবে, সে যেন এ মাসে রোযা পালন করে আর যে পীড়িত কিংবা সফরে আছে, সে অন্য সময় এ সংখ্যা পূরণ করবে, আল্লাহ তোমাদের জন্য যা সহজ তা চান, যা কষ্টদায়ক তা চান না যেন তোমরা মেয়াদ পূর্ণ করতে পার, আর তোমাদেরকে সৎপথে পরিচালিত করার কারণে তোমরা আল্লাহর মাহাত্ম্য ঘোষণা কর, আর যাতে তোমরা কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করতে পার।”

কুরআন নাজিলের মাস। রমজান মাসের গুরুত্ব। রমজানের ফজিলত

রমজান মাসের যদি অন্যকোন ফজিলতের উল্লেখ না থাকতো তাহলে এই এক ফজিলতেই তার জন্য যথেষ্ট হতো। রমজান মাসের পরিচয় ও গুরুত্ব বর্ণনা করতে গিয়ে আল্লাহ তালা এরশাদ করেন,

রমাযান মাস- যার মধ্যে কুরআন নাযিল করা হয়েছে লোকেদের পথ প্রদর্শক এবং হিদায়াতের সুস্পষ্ট বর্ণনারূপে এবং সত্য-মিথ্যার পার্থক্যকারীরূপে, কাজেই তোমাদের মধ্যে যে ব্যক্তি এ মাস পাবে, সে যেন এ মাসে রোযা পালন করে আর যে পীড়িত কিংবা সফরে আছে, সে অন্য সময় এ সংখ্যা পূরণ করবে, আল্লাহ তোমাদের জন্য যা সহজ তা চান, যা কষ্টদায়ক তা চান না যেন তোমরা মেয়াদ পূর্ণ করতে পার, আর তোমাদেরকে সৎপথে পরিচালিত করার কারণে তোমরা আল্লাহর মাহাত্ম্য ঘোষণা কর, আর যাতে তোমরা কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করতে পার।

See also  ঘুমানোর দোয়া বাংলায় । ঘুমানোর পূর্বে কোন দোয়া পাঠ করতে হয় জেনে নিন

আরো পড়ুন: শবে কদরের ফজিলত জেনে নিন

শুধু কোরান মাজীদ নয়, হযরত ইব্রাহীম (আ) এর সহিফা, তাওরাত ,যবুর, ইঞ্জিন সহ সকল আসমানি কিতাব আ মাসে নাজিল হয়েছে।

রমজানের ফজিলত সম্পর্কে হাদিস। রমজানের হাদিস

হযরত আবু হুরায়রা রা. হতে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ সাল্লালাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন,

আল্লাহতালার কসম! মুসলমানদের জন্য রমযানের চেয়ে উত্তম কোন মাস আসেনি এবং মোনাফিকদের জন্য অধিক ক্ষতিকর মাসেও আর আসেনি। কেননা মুমিনগন এ মাসে ইবাদতের শক্তি ও পাথেয় সংগ্রহ করে। আর মোনাফিকরা আমাদের উদাসিনতা ও দোষ ত্রুটি অন্বেষণ কর। এ মাস মুমিনদের জন্য গুনিমত আর মোনাফিকদেরে জন্য ক্ষতির কারণ।

হযরত আবু হুরায়রা (রা) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সো:) ইরশাদ করেছেন,

যে ব্যক্তি পরিপূর্ণ বিশ্বাস ও পর্যালোচনাসহ রমজান মাসের সিয়াম পালন করবে, তার পূর্ববর্তী ও পরবর্তী গুণাহ মাফ করে দেওয়া হবে। (সহীহ বুখারী: ৩৮, সহীহ মুসলিম: ৭৬০)

হযরত সাহল বিন সা’দ (রা.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সো:) ইরশাদ করেছেন,

জান্নাতের একটি দরজা আছে, একে রাইয়ান বলা হয়,। এই দরজা দিয়ে কিয়ামতের দিন একমাত্র সিয়াম পালনকারী ব্যক্তিই জান্নাতে প্রবেশ করবে। তাদের ছাড়া অন্য কেউ এই পথে প্রবেশ করবে না। সেদিন এই বলে আহ্বান করা হবে- সিয়াম পালনকারীগণ কোথায়? তারা যেন এই পথে প্রবেশ করে। এভাবে সকল সিয়াম পালনকারী ভেতরে প্রবেশ করার পর দরজাটি বন্ধ করে দেওয়া হবে। অত:পর এ পথে আর কেউ প্রবেশ করেবে না। (সহীহ বুখারী: ১৮৯৬, সহীহ মুসলিম: ১১৫২)

হযরত আবু হুরায়রা (রা) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সো:) ইরশাদ করেছেন,

সিয়াম ঢালস্বরূপ। তোমাদের কেউ কোনোদিন সিয়াম পালন করলে তার মুখ থেকে যেন অশ্লীল কথা বের না হয়। কেউ যদি তাকে গালমন্দ করে অথবা ঝগড়ায় প্ররোচিত করতে চায় সে যেন বলে, আমি সিয়াম পালনকারী। (সহীহ বুখারী: ১৮৯৪, সহীহ মুসলিম: ১১৫১)

See also  রোজা কবে থেকে শুরু ২০২৩ - বাংলাদেশে রমজান কবে শুরু

হযরত আবু হুরায়রা (রা) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সো:) ইরশাদ করেন,

আল্লাহ তায়ালা বলেছেন, সিয়াম ব্যতীত আদম সন্তানের প্রতিটি কাজই তার নিজের জন্য। কিন্তু সিয়াম আমার জন্য এবং আমিই এর প্রতিদান দেব। সিয়াম ঢালস্বরূপ। তোমাদের কেউ যেন সিয়াম পালনের দিন অশ্লীলতায় লিপ্ত না হয় এবং ঝগড়া-বিবাদ না করে। যদি কেউ তাকে গালি দেয় অথবা তার সঙ্গে ঝগড়া করে, তাহলে সে যেন বলে, আমি সিয়াম পালনকারী। যার হাতে মুহাম্মদের প্রাণ, তার শপথ! অবশ্যই সিয়াম পালনকারীর মুখের গন্ধ আল্লাহর নিকট মিসকের গন্ধের চেয়েও সুগন্ধি। সিয়াম পালনকারীর জন্য রয়েছে দু’টি খুশি, যা তাকে খুশি করে। যখন যে ইফতার করে, সে খুশি হয় এবং যখন সে তার প্রতিপালকের সাথে সাক্ষাৎ করবে, তখন সাওমের বিনিময়ে আনন্দিত হবে। (সহীহ বুখারী: ১৯০৪, সহীহ মুসলিম: ১১৫১)

হযরত আবু হুরায়রা (রা.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সো:) ইরশাদ করেন,

তোমাদের নিকট রমজান মাস উপস্থিত। এটা এক অত্যন্ত বরকতময় মাস। আল্লাহ তা’য়ালা এ মাসে তোমাদের প্রতি সাওম ফরজ করেছেন। এ মাসে আকাশের দরজাসমূহ উন্মুক্ত হয়ে যায়, এ মাসে জাহান্নামের দরজাগুলো বন্ধ করে দেওয়া হয় এবং এ মাসে বড় বড় শয়তানগুলোকে আটক রাখা হয়। আল্লাহর জন্যে এ মাসে একটি রাত আছে, যা হাজার মাসের চেয়েও অনেক উত্তম। যে লোক এ রাত্রির মহা কল্যাণলাভ হতে বঞ্চিত থাকল, সে সত্যিই বঞ্চিত ব্যক্তি। (সুনানুন নাসায়ী:২১০৬)

আরো পড়ুন: ঘুমানোর দোয়া বাংলায়

রমজানের ফজিলত সম্পর্কে  বলতে গিয়ে, মাসের আগমন ঘটলে নবীজী সাহাবীদের উদ্দেশ্যে বললেন, তোমাদের নিকট  এই মাস সমাগত হয়েছে, তাতে এমন একটি রাত রয়েছে, যা এক হাজার মাসের চেয়েও উত্তম। যে ব্যক্তি এই মাসের কল্যাণ থেকে বঞ্চিত হলো, প্রকৃত পক্ষে সে সকল কল্যাণ থেকেই বঞ্চিত।

তাই প্রত্যেক মুসলমানের উচিত ইবাদত বন্দেগী, যিকির- আযকার,তাসবীহ- তাহলীল ও অন্যান্য নেক আমলের মাধ্যমে এ রাতের রহমত বরকত লাভে সচেষ্ট থাকা।

আল্লাহ তাআলা আমাদের সবাইকে তাওফিক দান করুন। আমিন।